অতি দর্প আর অতি বুদ্ধি দুইই পতনের অনেক কারনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুই কারন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই সেই রকম। আই প্যাকের কর্নধার পি কে -র দাবার চালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপর্যয়, এবং একে একে বিজেপির প্রতীক চিন্হে জয়ী হওয়া বিধায়কদের মধ্যে অনেকেই বিধায়ক পদ ত্যাগ না করেই বিজেপি ত্যাগ করে ঘরওয়াপসি করে তৃনমূলে ফিরছেন। “এ তো হোনা হি থা…..” গানের সেই লাইনটা বেশ প্রাসঙ্গিক এ ক্ষেত্রে। শুধু সময় যখন হাতের মুঠোয় ছিলো বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব বুঝতে পারেন নি, বুঝতে চেষ্টাও করেন নি। রাজ্য জুড়ে যখন প্রবল বিজেপি হাওয়া, পি কে সেই হাওয়া আঁচ করতে এতটুকু ভুল করেননি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন সেই পি কে এও সম্ভবত বুঝে গেছিলেন, এই হাওয়ায় বিজেপি ভাসছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের প্রথম সারির নেতৃত্বদের মধ্যে শতাংশে দুশো শতাংশ বিশ্বাস তৈরি হয়ে যায় তাঁরাই পশ্চিমবঙ্গে এবার বিধানসভা নির্বাচনে দুই শতাধিক আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসছেন। বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়, যখন তাঁরা দেখেন মুকুল রায় থেকে শুরু করে একেরপর এক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। আল্হাদে আটখানা অবস্থার মতো বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বদের মনে সম্ভবত এমনই ধারণা তৈরি হয়, ব্যাস, আর যায় কোথায়, তৃণমূল গেরুয়া ঝড়ে বেসামাল হয়ে একেবারে ধরাশায়ী হয়ে যাবে। যারা হাজারো প্রতিকুলতার সাথে জীবন বাজি রেখে লড়াই করে এই রাজ্যে বিজেপিকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে ছিলেন, সময়ে তাঁরা উপেক্ষিত হয়েই রইলেন। একে একে দলবদলু তৃণমূল নেতাদের বিজেপি পদ্ম প্রতীকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে টিকিট দিয়ে দিলো। অসম্মানিত হয়েও পুরোনো পোড়খাওয়া নেতৃত্ব রা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গেলো। এতেও হলোনা, কাউন্টিং এজেন্ট এর মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় জানা না থাকলেও জনশ্রুতি, যে, বেশ কিছু সংখ্যক কাউন্টিং এজেন্ট নাকি প্রকৃতপক্ষে তৃনমূলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে নিয়েছিলো। ফলে নাকি অধিকাংশ অন্তরে তৃণমূল আর বাইরে বিজেপি এমন বেশ কিছু বিজেপির টিকিটে জয়ী তৃণমূলের দলবদলু নেতা জয়ী হয়েই কিছু দিন যেতে না যেতেই ঘরওয়াপসি শুরু করে দেন। পি কে নুন খেয়ে কাজে প্রমান করে হয়তো তখন এবং এখনও মনে মনে মুচকি হাসছেন। কারন একে একে ভাঙিছে দেউল। বিজেপি থেকে নিজের ঘর তৃনমূলে ফেরা অব্যাহত। ক্ষমতায় আসতে না পারার ব্যার্থতা ঢাকতে দুই থেকে সাতাত্তরের নতুন অহমিকাও চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছেন কি ভাবে পিকে ও মুকুল রায় মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে ও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব ।
মোদী-মমতা সেটিং এর আরও একটা উদাহরণ শুধুমাত্র ভবানীপুরের উপনির্বাচন সহ তিনটি আসনে উপনির্বাচন ঘোষণা। সাধারণ মানুষজনের অনেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই হাওয়া তূলেছেন, লজ্জা বোধ থাকলে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করবে না। জিতুন মমতা ব্যানার্জি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে যে কোনো গর্ব নেই, লজ্জা বেশি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির হাতে এটাও ২০২৪ এর একটা অস্ত্র হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। অনেক সাধারণ মানুষজন জানান, অনেক হয়েছে, এবার কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব আদি পোড়খাওয়া প্রকৃত বিজেপির নেতা কর্মীদের নিয়েই দল কাজ শুরু করুক। পরগাছা লাগালে কি অবস্থা হয় বিজেপি শিক্ষা নিক। আর কবে ক্ষমতা দখল হবে তবে মানুষের জন্য কাজ করা যাবে এই ধারণা উপড়ে ফেলে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে হবে। এই মূহুর্তে যারা বিজেপির বিধায়ক, দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। কারন, এলাকার এলাকার নানান ভাবে নির্যাতিত ক্ষতিগ্রস্ত ঘরছাড়া বিজেপির কর্মীরা দলীয় বিধায়ক ও অন্যান্য নেতাকর্মীদের সেভাবে পাশে পাচ্ছেন না। অথচ তৃনমূলের প্রাক্তন বিধায়করা পুরোপুরি মাঠে নেমে পড়েছেন। এমনকি দলমত নির্বিশেষে সকলের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সবাই বোঝে এটা রাজনীতি। কিন্তু যদি এটা মেকিও হয় তাহলেও বিষয়টি পরিষ্কার, যে রাজনীতির অঙ্কে তৃণমূল তথা পি কে এন্ড কোম্পানীর কৃতিত্ব। বিজেপির ব্যার্থতা।