তৃণমূল ত্যাগ করার কারণ কি শুধুই ক্ষমতার লোভ?
1 min read
আর মাত্র কয়েক মাস, তারপরই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এমনই একটি মোক্ষম সময়ে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের মতো একটি দল থেকে কেন এত পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে? ১৯৯৮ সালে যে দলের জন্ম, ২০১১ সালে যে দল এই রাজ্যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলো, কি এমন ঘটলো যে এতোদিনের সব সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গেলো? শুধুই কি ক্ষমতায়নের প্রশ্ন? সেটাই বা কি করে হয়। তারা তো প্রায় সকলেই এক বা একাধিক পদে আসীন ছিলেন। মন্ত্রীত্ব, বিধায়ক, জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত প্রধানের মত পদ অবলীলায় ত্যাগ করে, এমনকি দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এমনও নয়, অন্য দলে যোগ দিলে সবাই বিধায়ক,সাংসদ হয়ে যাবেন। তাহলে? প্রত্যেকেই চায় নুন্যতম সম্মান। যেটা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো না। সেখানে একনায়কতন্ত্র কাজ করে। কর্মীরা প্রাণপাত করে দলকে মজবুত করতে, জয়লাভ করতে লড়বেন, কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তাদের বলতে হবে তাঁরা কেউ কিছু নন, তাঁরা প্রার্থী মানে মমতা ব্যানার্জি প্রার্থী। তাঁদের কোনো অস্তিত্ব নেই। মমতা ব্যানার্জি নিজে কখনও তাঁর থেকে তাঁর দলের কেউ হাইলাইটস পাক এটা বরদাস্ত করতে পারেন না। চাটুকারিতা তিনি পছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু কেউ কেউ নিজস্ব ব্যক্তিসত্বা নিয়ে জন্মান। যেমন, মমতা ব্যানার্জির তুইতুকারি, উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে “তুমি তূমি” করে কথা বলা, মারতে যাওয়া, কুভাষা বলা চাটুকার, ক্ষমতালোভীরা মেনে নিতেই পারেন, সবাই নন। সুযোগ এলে তাঁরা তাঁদের এই নিত্যদিনের অসম্মানের পুর্ন সদব্যাবহার করে নেবেন এ আর আশ্চর্য কি। তেমনই যে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা তাঁদের নিজস্ব যোগ্যতা দিয়ে একটা দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছেন তাঁরা কিভাবে চাটুকারিতা করবেন? মমতা ব্যানার্জির পরেই একবাক্যে সবাই শুভেন্দু অধিকারীকে স্থান দিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শুভেন্দুকে
ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়াটা অনেকেই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এত অপমানের পরেও শুভেন্দু যখন একেরপর এক জেলায় তৃণমূলের খাতা খুলছেন তখনই তাঁর রাজনৈতিক যোগ্যতা চিনে নেওয়া যেত। পূর্ব মেদিনীপুরের অধীকারী পরিবারের তৃণমূলে অবদানের স্বীকৃতি না দিয়ে যখন শুভেন্দু অধিকারী অভিমানে, ক্ষোভে নিজে দলের সব কিছু থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন এমনই একটি সময়ে এক সাংসদকে দিয়ে শুভেন্দুকে লাগাতার অসম্মান সূচক ভাষা যত বলালেন বা অকৃতজ্ঞতা সূচক বক্তব্য রাখাকে প্রশ্রয় দিলেন, শুভেন্দুর জনপ্রিয়তা, গ্রহনযোগ্যতা ততই বেশি করে বাড়তে লাগলো। মুকুল রায়কে এমনিতেই বলা হয় চানক্য। দল তাঁর বিপদের সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তিনি কিন্তু সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। একই ভাবে শুভেন্দু অধিকারী যাকে অধিকাংশ তৃণমূল নেতা কর্মীরা যুবরাজ মনে করতেন, সেই চোখেই দেখতেন, মমতা ব্যানার্জি সেটা বুঝতে পেরে পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর ভাইপোকে কার্যত যুবরাজ করে দিলেন। তিনি সিঙ্গুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের অবদান মানেন না, নন্দিগ্রাম, নেতাই এ অধীকারী পরিবারের অবদান মানেন না। তাঁর আমিত্ব বোধ, তিনিই সব কিছু করছেন, সবই তাঁর অনুপ্রেরণায় হচ্ছে — এই ভ্রান্ত নীতি তাঁকে আজ খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। তিনি ২০২১ নির্বাচন জেতার জন্য সকলকে যোগ্য সম্মান দিয়ে একসাথে জনকল্যাণমুখি কাজ করতে পারতেন, তাঁর লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস কেউ অস্বীকার করেন না। কিন্তু কি এমন হলো যে এই নির্বাচন জেতার জন্য শ শ কোটি টাকা দিয়ে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়োগ করতে হলো! এটা হিন্দি বলয় নয়, বাংলা। বাঙালির সেন্টিমেন্ট মমতা ব্যানার্জিই বুঝতে চাইলেন না, প্রশান্ত কিশোর কি আন্দাজ করবেন। তাছাড়াও তিনি বুঝতে পেরে কোনো নির্দেশ দিলেও মমতা ব্যানার্জি কারো নির্দেশ মেনে যে চলবেন না এটাও হয়তো প্রশান্ত কিশোর নিজেও গোড়াতেই বুঝে গেছিলেন। তাই পি কে ম্যাজিক এখানে কাজে লাগছেনা। যখন সব মুখ্যমন্ত্রী নিজের রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে লাগাতার কুভাষায় অপমান করছেন, বৈঠক বয়কট করছেন। দলীয় রাজনীতি আর সরকার পরিচালনা একাকার করে দিলে চলেনা। কিছু চাটুকার মিডিয়া তাঁর ভুল পদক্ষেপ গুলো আড়াল করে গাছে তুলে দিচ্ছেন, কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলেই জানেন, এই সমস্ত মিডিয়া দরকষাকষিতে আরও বেশি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মই কেড়ে নিতে এতটুকু সময় নষ্ট করবে না। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় কতটা তার সময়ই বলবে। কিন্তু এটাও তো দলকে স্বীকার করতে হবে তৃনমূলের মধ্যে শিরায় শিরায় গোষ্ঠী দ্বন্দের ক্ষত, নির্বাচনের দোরগোড়ায় পৌঁছে আর কি ওষুধ দিয়ে সেই ক্ষত সারাতে পারবেন প্রশান্ত কিশোর এন্ড কোম্পানী!