দেবী মাতঙ্গিনী হাজরা : মনোরঞ্জন হাজরা
1 min read
নাম মাতঙ্গিনী। জন্ম 1869 সাল 17 নভেম্বর- তমলুকের কাছে হোগলা গ্রামে নিম্নবিত্ত পরিবারে। বাবা ঠাকুর দাস মাইতি, মা ভগবতী দেবী। মাত্র 12 বছর বয়সে সম্ভ্রান্ত কৃষক 60 বছরের ত্রিলোচন হাজরার দ্বিতীয় পত্নী হন। বিয়ের দুই বছর পর স্বামী মারা যান। নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হলেন। সংসার ছেড়ে পাশের একটি কুঠিরে আশ্রয় নেন। তরুণী হৃদয়ের সব আত্ম সুখ বিসর্জন দিয়ে পবিত্র চিত্র সন্নাসীর মতো বৈধব্য ব্রত ও ব্রহ্মচর্য সাধনা শুরু করেন। কুটিরে বাস করেও তার মধ্যে উদ্ভাসিত হলো ভারত -সংস্কৃতির মহান আদর্শ। *জনসেবা* কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করতেন -আমরণ করে গিয়েছেন এই জনসেবা। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী মণিলাল ভৌমিক এর মা ললিতা দেবীকে খুব স্নেহ করতেন মাতঙ্গিনী। মনিলাল এর বাবা গুণধর বাবুর কাছে শুনতেন দেশের পরাধীনতার কথা। তাকে স্বাধীন করার ভাবনার কথা। গুণধর বাবুর মাধ্যমে পরিচয় হয় অজয় বাবু, সতীশ বাবুর সাথে।। গান্ধীজিকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করতেন।। চরকা কাটতেন, খাদি পড়তেন, গান্ধী ভক্তি র জন্য লোকে তাকে গান্ধী বুড়ি বলেই ডাকতো।। আসল নাম বিস্মিত হয়ে গান্ধী বুড়ি নামে পরিচিত হলেন।১৯৩০ সালে যখন লবন আন্দোলনে উত্তাল তমলুক -কাঁথি -মহকুমা -মাতঙ্গিনী নেতৃত্বে মহা শ্মশানে লবণ সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়। ট্যাক্স বন্ধ আন্দোলন ও নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৩২ সালে সালে আলিনানের পাশে কৃষ্ণগঞ্জ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হাতে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা অন্যহাতে শাঁখ নিয়ে শঙ্খধ্বনি, সাথে বন্দেমাতরম ধ্বনি- দিতে দিতে মিছিলে হাঁটলেন তিনি। অসংখ্য সভা-সমিতিতে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছেন, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন কোথাও কোথাও।। আদালতে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন। লাট সাহেব কে কালো পতাকা দেখিয়ে জেল খেটেছেন 6 মাস।দেশপ্রেমে উদ্বোধিত করেছেন নিজেকে -এই ক্রমোন্নতি চরিত্রের অনিবার্য পরিণতি আত্ম বলিদান.।১৯৪২ সালে স্বাধীনতার যে অন্তিম সংগ্রাম শুরু হয়েছিল যার বীজ মন্ত্র করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে। লক্ষ্য লক্ষ্য শঙ্কাহীন চিত্ত মৃত্যুর গর্জন শুনতে পেল সংগীতের মতো।দেশমাতৃকার জন্য আত্ম বলিদান করে প্রাণ কৃতার্থ করতে চাইলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। মেদিনীপুর জেলার অবিভক্ত তমলুক মহাকুমার অজয় মুখোপাধ্যায়, সতীশ চন্দ্র সামন্ত,সুশিল কুমার ধারা ,কুমার চন্দ্র জানা রজনী কান্ত প্রামানিক প্রমুখ জননেতার নেতৃত্বে সেই আন্দোলন হয়ে উঠেছিল দুর্বার। ১৯৪২ সালে 29 শে সেপ্টেম্বর থানা দখল আন্দোলনে পুলিশের বন্দুকের সামনে শহিদ হলেন 25 জন। *যাদের মধ্যে অন্যতমা মাতঙ্গিনী তার আত্ম বলিদান কাহিনী ছিল বীরত্বব্যঞ্জক লোমহর্ষক বর্তমান প্রজন্মের কাছে তার মর্ম অনেক*।১৯৪২ সাল ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ঐদিন থানা দখলের জন্য বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ নিঃসংকোচে সমবেত হলেন *সকলেই নিরস্ত, হাতে জাতীয় পতাকা অস্ত্র একটাই বন্দেমাতারাম ধ্বনি* বজ্র নির্ঘোষ সে ধ্বনি চারিদিক প্রকল্পিত করে তুলল।সকলে চঞ্চল, অধীর কিন্তু সুশৃংখল। আগের দিন তিনি অজয় বাবুর কাছে বড় পতাকা নিয়ে গুলির সামনে যাবার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু অজয় বাবু সেই অনুমতি দেন নি।তিনি বলেন আমাদের শত শত শিক্ষিত যুবক থাকতে আপনি ৭৩ বছরের বৃদ্ধা যাবেন সামনে তাই কি হয়? মাতঙ্গিনী বলেন মেয়ে বলেই তুমি অনুমতি দিচ্ছ না কিন্তু আমি যাবই।তখন বাধ্য হয়ে অজয় বাবু বলেন যদি যুবক রা ছত্রভঙ্গ হয় তবেই তুমি সামনে বড় পতাকা নিয়ে যাবে।মিছিল বান পুকুরের পাশে আসতেই পুলিশের প্রতিরোধে পড়ল।মিছিল কিছুটা ছত্রভঙ্গ হলো,সেই সুযোগে মাতঙ্গিনী সামনের যুবকের হাত থেকে বড় পতাকা নিয়ে *মাতঙ্গী**র মতো এগিয়ে চললেন পুলিশের দিকে।**পুলিশ বাধা দিলে, মাতঙ্গী বলেন তোমরা তো ভারতীয়, আমরা দেশ স্বাধীন করতে এসেছি, দেশ স্বাধীন হলে তোমরাও স্বাধীন হবে**,বৃটিশদের পুলিশ হতে হবে না,কেন গোলামি করছ ইংরেজ দের? বিদ্রুপ করে *কা পুরুষ পুলিশ অনিল ভট্টাচার্য বলল আর এক পা এগোলেই গুলি করব*।নির্ভিকপ্রাণা মাতঙ্গিনী তেরঙ্গা পতাকা উঁচু তে তুলে *বন্দেমাতরম**ধ্বনি দিতে দিতে এগোল পুলিশের দিকে।মাতঙ্গী সেজেছে আজ সমর রঙ্গে।গুলি লাগল বাম হাতে,ডান হাতে পতাকা ধরে বলেন বন্দেমাতরম, গুলি করল ডান হাতে,**কোন রকমে জড়িয়ে ধরলেন প্রিয় পতাকাকে**।**কাপুরষ পুলিশ গুলি করল কপালে।ক্ষীন কণ্ঠে বন্দেমাতরম বলতে বলতে দেশমাতৃকার কোলে লুটিয়ে পড়লেন মাতঙ্গী মাতঙ্গিনী**। ৭৩ বছর ধরে তিল তিল করে তিনি নিজেকে পরিনত করেছিলেন। আত্মসুখ ত্যাগ করে পরহিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশের মুক্তির জন্য কঠোর তপস্যা করেছেন সারাজীবন। সে সাধনার, সে আরাধনার মোক্ষম সিদ্ধি হলো এই মহান আত্মবলিদান।তাঁর সেবা,দেশপ্রেম সর্বপরি দেশের জন্য আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা। আজ আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক। প্রশ্ন জাগে মনে,যে মাতঙ্গিনী দেবীর জন্য আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন বলি,তাঁদের সেই সংকল্প সত্যি ই কি আমরা বাস্তবায়িত করতে পেরেছি??????.